Saturday, January 30, 2016

প্রশ্ন ৫২২: ১৯৯৪ সালে আমার বাবা ও ২০০১ সালে আমার মা দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। যখনই আমি ইবাদাত বন্দেগী করি তখনই তাদের মাগফিরাতের জন্য দু‘ আ করি। এছাড়াও বাড়তি লোকের দু‘ আর জন্য প্রতি রমাযান মাসে কুরআনে হাফেজ দ্বারা খতমে কুরআন ও মসজিদের হুজুর দ্বারা ইফতার মাহফিল বা বড় ধরনের খানার আয়োজন করি এবং বহু লোকজন দাওয়াত করি ওনাদের মুক্তি কামনায় দু‘ আ করার জন্য। ইফতার পাটির্ ও খানার আয়োজন না করলে মুসল্লি − ও অন্যান্য রোযাদার লোকজন আসতে চান না। এখন তারা এসে যে দু‘ আ করেন সে দু‘ আ করলে আমার বাবা-মার কি কল্যাণ হবে বা হাফেজে কুরআন দ্বারা কুরআন খতম ও রোযাদার মুসল্লি দ্বারা দু‘ আ করালে সে সাওয়াব আমার বাবা-মা পাবেন কি? এ কাজ কতটুকু যুক্তিযুক্ত হাদীসের আলোকে জানালে উপকৃত হবো।

উত্তর : আমরা বিভিন্ন সময় বলে আসছি এবং অবগতির জন্য আবারও বলছি যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব বিষয়ে যে আদর্শ  রেখে গেছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম যে আদর্শস রেখে গেছেন তা অনুসরণ অনুকরণ করতে হবে। আপনি যে প্রক্রিয়ার কথা বললেন আসলে এটা ঠিক না। একজনের ইবাদাত বন্দেগি আরেকজন পেয়ে যায় এটাও ঠিক না। ইবাদাত বন্দেগি তিনি যা করেছেন সেটারই কল্যাণ তিনি পাবেন। দুনিয়াবাসী যারা দু‘ আ করবেন এই দু‘ আ করণেওয়ালারা সাওয়াব পাবেন এবং যে কবরবাসীর জন্য দু‘ আ করছেন তারাও উপকৃত হবেন আশা করা যায় এবং এ দু‘ আ আল্লাহ্ কবুলও করবেন মৃত ব্যক্তিদের পক্ষে। ইবাদাত বন্দেগি একজনেরটা আরেকজন করে দিতে পারেন না। জানাযার সময় যে দু‘ আ করা হয় সেটা আপনি সব সময় করতে পারেন। নামাযের আগে পরে করতে পারেন। কুরআন তিলাওয়াত করে করতে পারেন। কিন্তু হাফেজ সাহেবদের দিয়ে দু‘ আ করালে ও তিলাওয়াত করালে তাতে আপনার কি? আপনি আপনার আব্বার জন্য দু‘ আ করলে সেটাই হলো প্রকৃত দু‘ আ যেমন আমি আমার বাবা-মার জন্য দু‘ আ করি “রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগীরা” [সূরা বনী ইসরাইল : ২৪]। অর্থাৎ “হে আমার রব! আপনি পিতা-মাতার প্রতি দয়া করুন যেমনিভাবে তারা আমার প্রতি শৈশবে দয়া করেছিল”। আপনি আপনার বাবা-মার জন্য এ দু‘ আ করতে পারেন। হাদীসে এসেছে, মৃত ব্যক্তি যা দ্বারা উপকৃত হতে পারে তম্মধ্যে রয়েছে নেক সন্তানের দু‘ আ [সহীহ মুসলিম : ৩০৮৪]। হাফেজ সাহেবরা কুরআন তিলাওয়াত করলে তারা সাওয়াব পাবেন। আপনি বাবা-মার জন্য তিলাওয়াতসহ দু‘ আ করলে আপনার বাবা মা উপকৃত হবেন এটাই স্বাভাবিক। আর তারা কুরআন খতম করে যদি দু‘ আ করে তাদের দু‘ আও কবুল হতে পারে। তবে আমাদের দেশে আনুষ্ঠানিকতা করে মাইক দিয়ে যে দু‘ আ করা হয়, কুরআন তিলাওয়াত করা হয় এবং আলেমরা কয়েকজনে মিলে কুরআন খতম দিচ্ছেন এরকম আনুষ্ঠানিকতা লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআন পড়ছেন, মানুষরা শুনছেন না, বুঝছেন না এতে করে বরং কুরআনের তিলাওয়াতে বিঘ্ন ঘটছে। সুতরাং আপনি আপনার বাবা-মার জন্য তিলাওয়াত করবেন, দু‘ আ করবেন এবং তা কবুল হবে বলেও কুরআনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “আমি আহবানকারীর আহবান ও দু‘ আ কবুল করি যখন সে আমাকে ডাকে” [সূরা বাকার : ১৮৬]। আল কুরআনে আরো বলা হয়েছে, “তোমরা আমাকে ডাক বা আমার নিকট দু‘ আ কর আমি কবুল করব” [সূরা মু’ মিন : ৬০]। হাদীসে এসেছে : “কোনো নেক সন্তান রেখে যে ঈমানদার মা-বাবা দুনিয়া ত্যাগ করবে তারা কবরে সন্তানের দু‘ আ দ্বারা উপকতৃ হবেন” [সহীহ মুসলিম : ৩০৮৪]।

No comments:

Post a Comment